আজ শুরু মেয়েদের টি২০ বিশ্বকাপ


মহিলা টি২০ বিশ^কাপের অষ্টম আসরে অংশ নিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় দুই সপ্তাহ আগে যায় বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল। নিজেদের প্রস্তুতি নেওয়া এবং পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই এত আগে গেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে সেই প্রস্তুতিটা তেমন সুখকর হয়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) অফিসিয়াল ওয়ার্ম-আপ ম্যাচে তেমন ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। দুই ম্যাচে পাকিস্তানও ভারতের কাছে সহজেই আত্মসমর্পণ করেছে। এবার মূল লড়াইয়ে নামার অপেক্ষা।
এটি বাংলাদেশের মেয়েদের পঞ্চম বিশ^কাপ অংশগ্রহণ। বাংলাদেশের মেয়েরা নিজেদের প্রথম ম্যাচ আগামী রবিবার কেপটাউনের নিউল্যান্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবে। তবে বিশ^কাপের উত্তেজনা শুরু হচ্ছে আজ থেকেই। ১০ দলের এই আসরে দুই গ্রুপে ৫টি করে দল বিভক্ত হয়ে খেলবে। আজ উদ্বোধনী দিনে কেপটাউনের নিউল্যান্ডসে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি হবে।
২০১৪ সালে স্বাগতিক দল হিসেবে প্রথমবার মহিলা টি২০ বিশ^কাপ খেলে বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল। সেবার দুর্দান্ত খেলে আয়ারল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশের মেয়েরা। এরপর আরও ৩ বিশ^কাপে অংশ নিয়ে আর কোনো জয়ই পায়নি বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেটাররা। সবমিলিয়ে ১৭ ম্যাচ খেলে ১৫ হারের বিপরীতে মাত্র ২ জয় পাওয়া বাংলাদেশ এবারও আহামরি কিছু করতে পারবেন এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। প্রস্তুতি ম্যাচেই তা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তানের মেয়েদের কাছে ৬ উইকেটে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে ব্যাটিং তেমন ভালো করতে পারেননি নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। আগে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেটে মাত্র ১০১ রান করতে পেরেছে। আর তাই ১৬ ওভারে ৪ উইকেটে ১০৫ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে পাকরা। দ্বিতীয় প্রস্তুতি ম্যাচে বুধবার ভারতের কাছে ৫২ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। শুরুতে দারুণ বোলিংয়ে ভারতীয় মেয়েদের চাপে রাখতে পারলেও পরে রিচা ঘোষের ব্যাটিং তা-বে বিশাল সংগ্রহের নিচে চাপা পড়ে বাংলাদেশ।
রিচা ৫৬ বলে ৩ চার, ৯ ছক্কায় ৯১ রানে অপরাজিত থাকেন। ২০ ওভারে তাই ৫ উইকেটে ১৮৩ রানের বড় সংগ্রহ পেয়েছে ভারত। বোলিং ব্যর্থতার পর ব্যাটাররাও তেমন সুবিধা করতে পারেননি। শুধু ওপেনার মুরশিদা খাতুন ৩২ বলে ৫ চারে ৩২ ও অধিনায়ক জ্যোতি ৩৬ বলে ৩ চার, ১ ছয়ে ৪০ রানের দুটি ভালো ইনিংস খেলেন। এছাড়া অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে সুযোগ পাওয়া আলোচিত ব্যাটার স্বর্ণা আক্তার দুই ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছেন। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে এদিন ১৩১ রান করে বাংলাদেশ এবং ৫২ রানের বড় ব্যবধানে হেরে যায়।
দুই প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশ দলের শক্তিমত্তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। যদিও এবার অতীতের ব্যর্থতা কাটিয়ে ভালো কিছুর প্রত্যয় জানিয়ে দেশ ছেড়েছেন জ্যোতিরা। বাস্তবে সেটি কত চ্যালেঞ্জিং তা ওয়ার্ম-আপ ম্যাচেই বোঝা গেছে। মূল মঞ্চে লড়াইটা আরও কঠিন হবে। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা, গত ২ বারের এবং সবমিলিয়ে ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া, দুই বারের রানার্সআপ নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা। ‘বি’ গ্রুপে খেলবে ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আয়ারল্যান্ড। বিশ্বকাপের মূল লড়াই হবে ৩ ভেন্যু-কেপটাউনের নিউল্যান্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড, গেবেহার (পুরনো পোর্ট এলিজাবেথ) সেন্ট জর্জেস পার্ক ও পার্লের বোল্যান্ড পার্ক মাঠে।
উভয় গ্রুপ থেকে শীর্ষ ২টি করে দল উঠবে সেমিফাইনালে। ২৩, ২৪ ফেব্রুয়ারি দুটি সেমিফাইনাল এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে কেপটাউনের নিউল্যান্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। ১২ ফেব্রুয়ারি কেপটাউনে শ্রীলঙ্কা, ১৪ ফেব্রুয়ারি গেবেহায় অস্ট্রেলিয়া, ১৭ ফেব্রুয়ারি কেপটাউনে নিউজিল্যান্ড ও ২১ ফেব্রুয়ারি কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ বাংলাদেশের। এবারও বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েই মূল পর্বে খেলছেন জ্যোতিরা। কিন্তু মূল মঞ্চে প্রতিবারই হতাশা উপহার দিয়েছেন তারা। এবার প্রস্তুতি ম্যাচে অবশ্য গত দুই আসর ও সবমিলিয়ে ৫ বারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে চমক দিয়েছে বাছাইয়ের রানার্সআপ আয়ারল্যান্ডের মেয়েরা।
তবে অজি মেয়েরা আবার গত আসরের রানার্সআপ ভারতকে ঠিকই হারিয়েছে। প্রস্তুতি ম্যাচগুলো দাপট দেখিয়েছে ইংল্যান্ড মহিলা ক্রিকেট দল। ২০০৯ সালের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন ইংলিশরা পরে ৩ বার রানার্সআপ হয়েছে। এবার তারা বিশ^কাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার হিসেবে প্রমাণ করেছে প্রস্তুতি ম্যাচে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৪৬ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে জিতে এবং আরেক ম্যাচে শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে। তাই জমজমাট একটি বিশ^কাপের প্রত্যাশা সবার।