চট্টগ্রামে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে

অথর
কুষ্টিয়া অনুসন্ধান নিউজ ডেক্স :   বাংলাদেশ
প্রকাশিত :১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ | নিউজটি পড়া হয়েছে : 125 বার
চট্টগ্রামে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে

মহানগরীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাস্তবায়িত হতে চলেছে স্যুয়ারেজ প্রকল্প। মহানগরীর মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ৬ ক্যাচমেন্টে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে হালিশহর ক্যাচমেন্ট। ৬ ক্যাচমেন্টে পৃথক পৃথকভাবে ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এ স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
এ নগরীর ইতিহাস অনুযায়ী প্রায় ৩শ’ বছর পূর্বে এর গোড়াপত্তন গড়ার পর ১৯৬৩ সাল থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সুপেয় পানি সরবরাহ করে যাচ্ছে। পানি সরবরাহ এ সংস্থা ইতোমধ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। চাহিদা অনুযায়ী দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ হচ্ছে। কিন্তু এ নগরীতে কোনো স্যুয়ারেজ প্রকল্প গৃহীত হয়নি। ইতোপূর্বেকার বিভিন্ন সরকার আমলে এ বিষয়টি খুব বেশি আমলে নেওয়া হয়নি। বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা একটি স্যানিটেশন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। এতে আগামী চল্লিশ বছরের মধ্যে নগরীর ওয়েস্ট ওয়াটার ও পরিশোধন অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ চিহ্নিত করা হয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে ২০৬৫ সাল নাগাদ চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, শহরবাসীর সৃষ্ট পয়ঃবর্জ্য সুপেয় পানির উৎস কর্ণফুলী ও হালদা নদীকে প্রতিনিয়ত দূষণ করছে এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। সুপেয় পানির উৎস এ দুটি নদীকে পয়ঃবর্জ্য নিঃসরণজনিত দূষণ হতে রক্ষার প্রয়োজন। এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে মহানগরীকে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার সূচনা এবং ক্রমান্বয়ে নগরবাসীকে আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় আনার লক্ষ্যেই স্যানিটেশন মাস্টারপ্ল্যান প্রণীত হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাস্টারপ্ল্যানে পুরো নগরীকে ৬ ক্যাচমেন্ট এলাকায় ভাগ করে বর্তমানে হালিশহর ক্যাচমেন্টের জন্য প্রথম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। তিনি জানান, প্রথম পর্বের এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮শ’ কোটি টাকারও বেশি। যেখানে সরকার ও ওয়াসার নিজস্ব ফান্ড থেকে এ অর্থ জোগান দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অপর ৫ ক্যাচমেন্ট এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইতোমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ক্যাচমেন্ট এলাকা-২ ও ৪-এ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাপানের জাইকার কারিগরি পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক কাজের শুরু হয়েছে।

২০৩০ সাল নাগাদ প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন হবে বলে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ আশাবাদী। ক্যাচমেন্ট-৩ এ উন্নয়ন সহযোগী ইডিসিএফ কারিগরি পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে প্রকল্পের প্রস্তুতিমূলক সমীক্ষা কাজ শুরু করেছে। অনুরূপভাবে ক্যাচমেন্ট-৫ এ উন্নয়ন সহযোগী এএফডি কারিগরি পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে তাদের প্রস্তুতিমূলক সমীক্ষা কাজ সম্পন্ন করেছে। অপরদিকে, ক্যাচমেন্ট-৬ প্রকল্পটি জি টু জির মাধ্যমে জাপানি সংস্থা মারুবিনি কর্পোরেশন সমীক্ষা কাজ শুরু করেছে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ জানিয়েছেন, টানা দু’বছর সমীক্ষা শেষে চট্টগ্রাম ওয়াসা শহরের জন্য একটি স্যানিটেশন ও ড্রেজেন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছে। এ স্যানিটেশন মাস্টার প্ল্যানে চট্টগ্রামকে ৬ এলাকায় ভাগ করা হয়েছে।

শহরের ৬০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে পাইপ স্যুয়ারেজ এবং ৩০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে ইন্টারসেপ্টর ও পাম্পের আওতায় এনে মোট ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে স্যুয়ারেজ ব্যবস্থায় আনা হবে। অবশিষ্ট ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে উন্নত অন-সাইট স্যনিটেশনের আওতায় এনে শহরকে পয়ঃজনিত দূষণ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করা যাবে।
তিনি জানান, ৬ ক্যাচমেন্টে সর্বমোট বিনিয়োগ পরিকল্পনা করা হয়েছে ২৩ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে হালিশহর ৩ হাজার ৮০৮, কালুরঘাট ৪ হাজার ১৮৪, ফতেয়াবাদ ১ হাজার ৭শ’, পূর্ব বাকলিয়া ৫ হাজার ৩৩৮, উত্তর কাট্টলী ৩ হাজার ৪৮৫ এবং পতেঙ্গা ক্যাচমেন্টের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।
এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ের হালিশহর ক্যাচমেন্টের কাজ এগিয়ে চলেছে। প্রকল্প পরিচালক জানান, হালিশহর ক্যাচমেন্টের জন্য ১৬৫ একর জায়গায় ট্রিটমেন্ট প্লান্টসহ আনুষঙ্গিক কাজে পাইপ লাইনের জন্য ২শ’ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন