বাঘিনীদের আরেকটি শিরোপা

অথর
কুষ্টিয়া অনুসন্ধান নিউজ ডেক্স :   বাংলাদেশ
প্রকাশিত :১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৫:১৫ পূর্বাহ্ণ | নিউজটি পড়া হয়েছে : 53 বার
বাঘিনীদের আরেকটি শিরোপা

এক দল দাউদাউ করে জ¦লছিল প্রতিশোধের আগুনে। অন্য দল ছিল শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্নে বিভোর, তাতে মিশে ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মাদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে উপস্থিত হাজার ছয়েক বাংলাদেশী ভক্ত-সমর্থক-দর্শক-ফুটবল অনুরাগীদের অকুণ্ঠ সমর্থন বৃথা যায়নি।

প্রতিশোধ নিতে গিয়ে উল্টো বঙ্গকন্যাদের তোপে পড়ে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে হিমালকন্যাদের। হ্যাঁ, বৃহস্পতিবার যেন ‘বৃহস্পতি তুঙ্গে’ ছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ জাতীয় নারী ফুটবল দলের। ফাইনালে তারা প্রতিপক্ষ নেপালকে হারায় ৩-০ গোলের পরিষ্কার ব্যবধানে। আর এর মাধ্যমে সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। খেলার প্রথমার্ধের স্কোরলাইন ছিল ২-০।
ভুটানি রেফারি ইয়াংখে শেরিং খেলা শেষের বাঁশি বাজাতেই শিরোপা জেতার উল্লাসে ফেটে পড়ে খেলোয়াড়রা। মাঠে গোল হয়ে বসে জাতীয় পতাকায় নিজেদের ঢেকে আবেগে আপ্লতু হয়ে পড়ে বাংলার বাঘিনীরা। একটু পর নিজেদের সামলে নিয়ে সবাই ছুটে যায় কোচ ছোটনের কাছে। কোচ জড়িয়ে ধরে তাদের আদর করেন। বোতলের ছিপি খুলে জল ছিটিয়ে পরস্পরকে ভিজিয়ে দেন। ফুটবলাররা সবাই পুরো মাঠ প্রদক্ষিণ করে দর্শকদের অভিবাদনের জবাব দেন।

আর নেপালের ফুটবলাররা ছিলেন ‘অধিক শোকে পাথর’! সাফের বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলোতে এটা বাংলাদেশের দশম ফাইনাল এবং পঞ্চম শিরোপা। এর আগে ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ তে ভারতকে ১-০ গোলে, ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ তে নেপালকে ১-০, ২০২১ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ এ ভারতকে ১-০ গোলে এবং ২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।
বিজয়ী ও বিজিত দলকে পুরস্কৃত করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। আরও উপস্থিত ছিলেন সাফের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল, বাফুফে সদস্য ও এএফসি কাউন্সিল মেম্বার মাহফুজা আক্তার কিরণ, বাফুফের সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ প্রমুখ।
ফাইনালে বাংলাদেশ দলের একাদশ ছিল অপরিবর্তিত। প্রথমার্ধে একাধিক আক্রমণ শাণায় তারা। বলের নিয়ন্ত্রণেও এগিয়েছিল তারা। কিন্তু পরিকল্পনার অভাবে তাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় ৪১ মিনিট পর্যন্ত। সবচেয়ে দৃষ্টিকটু ছিল তাদের প্রচুর ভুল ও ‘মুখস্ত’ পাসের ছড়াছড়ি!
২ মিনিটেই গোল পেতে পারত বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে মাহফুজার লম্বা পাস ধরে বক্সে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন শামসুন্নাহার।

বিপদ বুঝে নেপাল গোলরক্ষক কবিতা বিকে এগিয়ে এসে বল ঠিকঠাক বিপন্মুক্ত করতে পারেননি। বল পেয়ে যান আকলিমা। বক্সের ঠিক বাইরে থেকে ফাঁকা পোস্ট লক্ষ্য করে উঁচু শট নেন। বল চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে। ৩ মিনিটে স্বপ্নার কর্নার থেকে মাহফুজার হেড পোস্টের ওপর দিয়ে মিস হয়। ১৮ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে বক্সের ভেতরে ঢুকে রিপা গড়ানো ক্রস করেন। আকলিমা তা থেকে যে ডান পায়ের গড়ানো শট নেন সেই জোরালো শট নেপালি গোলরক্ষককের হাত ফস্কে যায়।

ফিরতি বলে এক নেপালি ডিফেন্ডার গোলরক্ষককে ব্যাকপাস দিলে গোলরক্ষক তা হাত দিয়ে ধরেন। কিন্তু এভাবে বল ধরাটা অবৈধ। কিন্তু বিস্ময়করভাবে রেফারি ফ্রি কিকের নিদের্শ না দিয়ে বরং খেলা চালিয়ে যান। বাংলাদেশ দলের প্রবল আপত্তিতেও কান দেননি!
৩৬ মিনিটে গোল পেতে পারত নেপালও। বক্সের ভেতরে আমিশা কারকির গড়ানো শট অল্পের জন্য পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। ৩৭ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে শামসুন্নাহার যে উড়ন্ত ক্রসটি বক্সে ফেলেন, তা অনেক কষ্টে জটলার মধ্যে বিপন্মুক্ত করেন নেপালি গোলরক্ষক। ৩৮ মিনিটে বক্সের মাথা থেকে রিপার ডান পায়ের উড়ন্ত শট পোস্টে ঢোকার আগ মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে হাত দিয়ে বলের গতিপথ পরিবর্তন করে বলকে মাঠের বাইরে পাঠান নেপালি গোলরক্ষক। কিন্তু রেফারি কর্নার দেননি বাংলাদেশের পক্ষে!
৪২ মিনিটে অবশেষে গোলের মুখ দেখে বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে স্বপ্না রানী উড়ন্ত-লম্বা পাস দেন। সেই বল ধরে আকলিমা বক্সে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের ট্যাকলে বল নিয়ন্ত্রণে নিতে না পেরে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। নেপালের ডিফেন্ডার কুমারী তামাং বলটি ঠিকমতো বিপন্মুক্ত করতে পারেননি। বল পেয়ে যান রিপা। বক্সের ঠিক লাইন থেকে রিপা ডান পায়ের যে বাঁকানো জোরালো শটটি নেন, তা আর ফেরাতে পারেননি নেপালি গোলরক্ষক (১-০)।
প্রথমার্ধের সংযুক্তি সময়ে (৪৫+১ মিনিটে) ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। নিজেদের সীমানা থেকে উঁচু-লম্বা লব করেন আফিদা। সেই বল নিজেদের ডি-বক্সের ভেতরে বিপন্মুক্ত করতে পারেননি নেপালের প্রতীক্ষা চৌধুরী। বল নিয়ে ঢুকে পড়েন শামসুন্নাহার। এদিকে বিপদ বুঝে ততক্ষণে সামনে এগিয়ে এসেছেন নেপালি গোলরক্ষক। ঠান্ডা মাথায় বাংলাদেশ অধিনায়ক তার ডান পায়ের দর্শনীয় গড়ানো প্লেসিং শটে লক্ষ্যভেদ করে বাংলাদেশী দর্শক-সমর্থকদের আনন্দে ভাসান (২-০)।

৫৬ মিনিটে আফিদার লং ফ্রি কিক নেপালের বক্সে গিয়ে পড়ে। গোলরক্ষক এগিয়ে আসেন বল ধরতে। শামসুন্নাহার দৌড়ে গিয়ে সেই বলে শট নিলেও তা পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়। ৭৯ মিনিটে স্বপ্নার বাড়ানো উঁচু লব ধরে বক্সের মাথায় চলে যান শামসুন্নাহার। বিপদ বুঝে সামনে এগিয়ে আসেন কবিতা। শামসুন্নাহারের শট আটকে দেন তিনি। ৮০ মিনিটে বক্সের ভেতরে জটলার মধ্যে নেপালের আমিশা কারকির শট রূপনার হাতে লেগে সাইডপোস্টে লেগে কর্নার হয়। কর্নার থেকে দীপা শাহীর হেড পোস্টের ওপর দিয়ে চলে গেলে জোড়া বিপদ থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ।

৮৭ মিনিটে আরেকটি গোল করে জয় নিশ্চিত করে ফেলে গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। শামসুন্নাহারকে ফাউল করা হলে ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। ডি-বক্সের সামান্য বাইরে থেকে রিপার হাওয়ায় ভাসানো শটের বল নেপালের সেকেন্ড বারে অরক্ষিত দাঁড়ানো বদলি ফরোয়ার্ড উন্নতি খাতুনের পায়ে পড়ে। সেই বল ছুটে গিয়ে বা দিয়ে জালে জড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে রিজার্ভ বেঞ্চের সহ-খেলোয়াড় এবং কোচিং স্টাফদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন (৩-০) উন্নতি। তারপর খেলা শেষ হলে যে দৃশ্যের অবতারণা হয়, সেটা লেখার শুরুতেই বলা হয়েছে।
পুরস্কারসমূহ ॥ ফেয়ার প্লে ট্রফি-ভুটান, সেরা গোলরক্ষক-রূপনা চাকমা (বাংলাদেশ), সর্বোচ্চ গোলদাতা- (৫টি, শামসুন্নাহার, বাংলাদেশ), মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার- শামসুন্নাহার (বাংলাদেশ), রানার্সআপ-নেপাল (মেডেল), চ্যাম্পিয়ন-বাংলাদেশ (মেডেল ও ট্রফি)।
বাংলাদেশ ॥ রূপনা চাকমা, নাসরিন আক্তার, সুরমা জান্নাত, আফিদা খন্দকার, সোহাগী কিসকু, স্বপ্না রানী, মাহফুজা খাতুন (উন্নতি খাতুন), শাহেদা আক্তার রিপা, আকলিমা খাতুন (আইরিন খাতুন), ইতি খাতুন, শামসুন্নাহার (হালিমা আক্তার)।

সংবাদটি শেয়ার করুন