সাভারে ফুটপাতের দোকানে চাঁদাবাজি
সাভার কিংবা আশুলিয়া, উপজেলার যেখানেই চোখ যায় গুরুত্বপূর্ণ সব পয়েন্টের ফুটপাতেই রয়েছে অবৈধ দোকানপাট। একটি বা দুটি নয়, এই সংখ্যা ৬ হাজারেরও অধিক, আর এসব অবৈধ দোকানপাট থেকে মাসে আদায়কৃত চাঁদার পরিমাণ অন্তত তিন কোটি টাকা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শুধু ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ককে কেন্দ্র করে উপজেলার হেমায়েতপুর, সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড, নবীনগর বাসস্ট্যান্ড, পল্লী বিদ্যুৎ বাসস্ট্যান্ড, বাইপাইল বাসস্ট্যান্ড, ইপিজেড স্ট্যান্ড, বলিভদ্র্র বাজার শুধু এই পয়েন্টগুলোতেই মহাসড়কের উভয় পাশের ফুটপাতে রয়েছে অন্তত ৬ হাজার দোকানপাট।
বিভিন্ন সময় স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সাময়িকভাবে ফুটপাত থেকে এসব অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হলেও দুয়েকদিনের ব্যবধানে সেটি পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। এদিকে ফুটপাত দখলের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজটের সেই সঙ্গে পথচারীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়ক ব্যবহার করতে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্র ও হকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব এলাকার ফুটপাতে দোকান পরিচালনা করছে এমন অন্তত ১০-১৫ জন। যাদের মধ্যে হকার্স লীগসহ স্থানীয় নেতারা জড়িত রয়েছে। যারা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দৈনিক হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আশুলিয়ার ইপিজেড থেকে বলিভদ্র বাসস্ট্যান্ড এলাকা পর্যন্ত হকার বসিয়ে ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লতিফ ম-লের নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর ও আতিক নামে দুই ব্যক্তি চাঁদা আদায় করে। জানতে চাইলে বিষয়টি লতিফ ম-ল অস্বীকার করে বলেন, ফুটপাতে চাঁদা আদায়ের সঙ্গে আমি জড়িত নয়।
এছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী, পল্লীবিদ্যুৎ বাসস্ট্যান্ড, বাইপাইল ও নবীনগর এলাকায় রয়েছে একাধিক চক্র যারা হকারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে। অন্যদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত সড়কের উভয়পাশে প্রায় দেড় হাজার দোকান বসিয়ে টাকা আদায় করে বাংলাদেশ হকার্স লীগ সাভার উপজেলা ও আওয়ামী হকার্স লীগ।
সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আট বছর যাবত ফুটপাত বসিয়ে পণ্য বিক্রি করে আনোয়ার, রিপনসহ একাধিক হকার জানান, স্থানীয় হকার্স লীগ ও সরকারি দলের নেতাসহ বিদ্যুৎ বিল ও প্রশাসনকে ম্যানেজের কথা বলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। দোকানের আকার ও স্থানভেদে ১শ’ থেকে ৪শ’ টাকা আদায় করে তারা। এভাবে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয়। কেউ চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেই তাদের দোকান তুলে দেওয়াসহ মারধরের শিকার হতে হয়। চাঁদাবাজদের হাত থেকে বাঁচতে হকাররাও চায় পুনর্বাসন।
হকার বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ সম্পর্কে বাংলাদেশ হকার্স লীগ সাভার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাদির মোল্লা বলেন, সাভারের হেমায়েতপুরে হকার আছে ১৫০০, সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আছে ১৬০০ এবং আশুলিয়ায় আছে আনুমানিক আরও ৩০০০। এছাড়া আরও বিভিন্ন পয়েন্টে তো আছেই। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পূর্ব পাশ নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ হকার্স লীগ আর পশ্চিম পাশের নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী হকার্স লীগের কাছে।
বাংলাদেশ হকার্স লীগের পক্ষ থেকে প্রতিদিন প্রতিটি দোকান থেকে ৩০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হয়। আদায়কৃত টাকা পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পেছনে ব্যয় করা হয়। এছাড়া ফুটপাত থেকে আর কোনো চাঁদা আদায় করা হয় না। আরও বেশি টাকা চাঁদা তোলার ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি অস্বীকার করেন।
হকারদের পুনর্বাসনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হকার্স লীগ সাভার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাদির মোল্লা আরও বলেন, হকারদের জন্য সাভার বাজার স্ট্যান্ডে নিউমার্কেটের বিপরীত পাশে স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জায়গা হলেই তারা বাসস্ট্যান্ড এলাকা ছেড়ে দেবে। সেখানে প্রায় ১৬০০ হকার বসতে পারবেন।
আশুলিয়ার বলিভদ্র বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পোশাক শ্রমিক আফছানা বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, কারাখানায় যাওয়া আসা অনেক কষ্টকর। ব্যবসায়ীরা দিন-দিন সড়কটাই দখল করে নিচ্ছেন। জনগণের সুবিধার্থে ফুটপাত দখল মুক্ত করে চলাচলের জন্য উপযোগী করার দাবি জানান তিনি। শুধু আফছানা নয় পোশাক শ্রমিক, বেশ কয়েকজন পথচারীসহ সুশীল সমাজের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের সবার দাবি, মহাসড়কের পাশের ফুটপাত দখলমুক্ত করে সাধারণ মানুষের চলাচলের উপযোগী করার।
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক বলেন, আমরা জেলা পুলিশের সহায়তায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছি কিন্তু হকাররা তাও ফুটপাত দখল করে রাখে। ঠিক কত দোকান আছে আমি বলতে পারব না। ফুটপাতে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের জানা নাই।