স্বাস্থ্যকর্মীর কৃতিত্ব স্বাভাবিক প্রসবে রেকর্ড

অথর
কুষ্টিয়া অনুসন্ধান নিউজ ডেক্স :   বাংলাদেশ
প্রকাশিত :১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১:৩১ পূর্বাহ্ণ | নিউজটি পড়া হয়েছে : 109 বার
স্বাস্থ্যকর্মীর কৃতিত্ব স্বাভাবিক প্রসবে রেকর্ড

বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের প্রান্তিক জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নে কাজীপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে ৮০০ স্বাভাবিক প্রসব করিয়ে রেকর্ড গড়েছেন স্বাস্থ্যকর্মী নেহেরুন নেহার লিলি। বর্তমানে শিশু জন্মে অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের ফলে ইনফেকশন ও মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, অঙ্গহানি, জমাট রক্ত ইত্যাদির কারণে মায়েদের সুস্থতা ফিরে পেতে প্রাকৃতিক প্রসবের তুলনায় অনেক দীর্ঘ সময় লাগে।
এছাড়া সিজারিয়ান অপারেশনের কারণে প্রাকৃতিক জন্মের লাভজনক দিকগুলোও নষ্ট হতে পারে। যেমন, শিশু মায়ের প্রসবের পথ দিয়ে যদি স্বাভাবিকভাবে বের হয় তাহলে তার শরীর কিছু ভালো ব্যাকটেরিয়া গ্রহণ করতে পারে। এসব ব্যাকটেরিয়া শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।
অস্ত্রোপচারের ফলে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সে যেতে পারে না। যার ফলে এই ভালো ব্যাকটেরিয়া সে পায় না।
এছাড়া মায়ের বুকের দুধ পান করার জন্য মায়ের সঙ্গে শিশুর যে শারীরিক নৈকট্যে আসা দরকার সিজারিয়ান হলে সেটি প্রয়োজনের তুলনায় দেরিতে ঘটে। কারণ মায়ের সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য শিশুকে তখন কিছু সময় দূরে রাখা হয়। একদম শুরুর দিকে মায়ের বুকের দুধের বাড়তি উপকারিতা রয়েছে। তা থেকে সে বঞ্চিত হয়। এছাড়া অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার এর মাধ্যমে সন্তান প্রসব করলে প্রসূতি মায়ের মৃত্যুঝুঁকি যেমন থাকে তেমনি ব্যয় হয় অনেক অর্থ।

তবে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের প্রসূতি মায়েদের অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার করে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা নেই। যার মূলে রয়েছেন কাজীপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মেহেরুন নেহার লিলি। তিনি ২০১১ সালে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) পদে যোগদান করেন কাজীপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে। এরপর ২০১৪ সালে ঠাকুরগাঁও সদর হসপিটাল থেকে কমিউনিটি স্কিল ব্যর্থ অ্যাটেনডেন্ট (সিএসবিএ) বিষয়ে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ২০১৫ সালে প্রথম নরমাল ডেলিভারি করাতে শুরু করে সফল হন।

প্রথমে ভয়ে ভয়ে স্বাভাবিক প্রসব কার্যক্রম শুরু করেন, সফল হলে তার সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত তিনি ৮০০ এর অধিক স্বাভাবিক প্রসব করিয়েছেন। যার অধিকাংশই সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র, চা শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, দিনমজুর, পরিবারের বধূ। এসব স্বাভাবিক প্রসব করাতে তিনি কোনো অর্থ নেন না। মেহেরুন নেহার (লিলি) জানান ‘আমি আমার দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে মানব সেবার মহান ব্রত নিয়ে এই কাজ করছি। গভীর রাত, বৃষ্টি, ঝড়, তীব্র শীত উপেক্ষা করে যখন একটি ফুটফুটে শিশুর মুখ দেখি তখন সব ক্লান্তি ভুলে যাই।

‘মেহেরুহ নেহার ৩ কন্যা সন্তানের জননী। তার স্বামী মকসেদ আলী, সিএ পদে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরি করেন। মকসেদ আলী জানান ‘আমার স্ত্রীর এই মহৎ কাজ করতে সবসময়ই পাশে থেকে সহযোগিতা করেছি, উৎসাহ দিয়েছি, সে অসহায় মানুষের সেবা করছে। এতে মৃত্যুঝুঁকি কমার পাশাপাশি অর্থ ব্যয় থেকে রক্ষা পাচ্ছে’ সেবা গৃহীতা আকলিমা জানান ‘আমাদের সকল মায়েদের আস্থা ভরসার জায়গা করে নিয়েছেন মেহেরুন আপা, দোয়া করি তার জন্য। মেহেরুন নেহার লিলি আরও জানান ‘যতদিন সুস্থ আছি প্রান্তিক নারীদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখব।’
এছাড়া মেহেরুন নেহার লিলি তার কমিউনিটি ক্লিনিকে সরকারি ৩০ ধরনের ওষুধসহ সকল সেবা দেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার গঠনের পর কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প গ্রহণ করেন। গ্রামীণ প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে ক্লিনিক নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। প্রাথমিকভাবে সাড়ে ১৩ হাজার ক্লিনিক নির্মাণের কথা ভাবা হয়েছিল। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটগাতি ইউনিয়নের গিমাডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করেন।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর তা আবার প্রাণ ফিরে পায়। বর্তমানে প্রায় ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন অনলাইন জরিপ ও বিবিএসের তথ্য অনুসারে কমিউনিটি ক্লিনিকের ৯৪ শতাংশের বেশি গ্রাহক তাদের পরিষেবা ও সুবিধার ক্ষেত্রে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন